Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

রসনা বিলাস ও পুষ্টির হিসাব নিকাশ

কাজী আবুল কালাম

মানুষ প্রতিদিন খাদ্য গ্রহণ করে। কেউ বেঁচে থাকার জন্য খেয়ে থাকেন, আবার কেউ বা রসনা বিলাসের জন্য খেয়ে থাকেন। খাবার কি শুধুই রসনা বিলাসের জন্য, নাকি এর অন্য কোনো দিকও আছে? আছে বৈকি! আচ্ছা, কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়- আপনি খাদ্য চয়নে (food choice) কি করেন? এক্ষেত্রে কি পুষ্টিগুণের কথা ভাবেন? নিশ্চিতভাবেই  সিংহভাগের উত্তর হবে খাদ্য চয়নের ক্ষেত্রে খাবারের তৃপ্তি বা জিহ্বার স্বাদই মুখ্য। তবে দুয়েকজন হয়তো বলবেন, তারা পুষ্টিগুণের কথাও বিবেচনাতে নেন। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি জানা প্রয়োজন ‘স্বাস্থ্যকর খাবার’ এবং ‘অস্বাস্থ্যকর খাবার’ কী? এ বিষয়ে পুষ্টি বিজ্ঞানী বা স্বাস্থ্যবিদের মত কী? ‘অস্বাস্থ্যকর খাবার’ হলো সেই খাবার যা উচ্চ ক্যালরি ও চিনি যুক্ত, লবণের পরিমাণ বেশি, খাদ্য আঁশ কম, অণুপুষ্টি (micronutrient) অপর্যাপ্ত এবং অপরিচ্ছন্ন জায়গায় প্রস্তুতকৃত। এ খাবারগুলো নিরাপদ খাবার নয়। অপরদিকে খাদ্যের মান অর্থাৎ ভেজালমুক্ত, আঁশযুক্ত, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার পরিমাণমতো অর্থাৎ দেহের দৈনন্দিন চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে খাবার গ্রহণ করলেই তাকে বলা যায় ‘স্বাস্থ্যকর খাবার’। প্রতিদিন সম্ভব হলে স্বল্প পরিমাণে প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ (টক/মিষ্টি দই, পনির, পান্তাভাত) খাবার খাওয়া যেতে পারে। প্রোবায়োটিক অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি ও অপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ এবং গৃহীত খাবার পরিপাকের সহায়তা করে; এর ফলে পরিপাক নালীর কাজকর্ম সুস্থভাবে সম্পন্ন হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সময় ও পরিমাণটাও গুরুত্বপূর্ণ। না খেয়ে যতজন মারা যান, বেশি খেয়ে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক লোক মারা যান - এটিই সত্যি। পরিসংখ্যানও সে কথার সাক্ষ্য দেয়। দেশে ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে ওজনাধিক্যের সংখ্যা এবং অসংক্রামক রোগীর সংখ্যা। অসংক্রামক রোগের (উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, লিভারজনিত, কিডনির জটিলতা, ডায়াবেটিস  প্রভৃতি) কারণই হলো ‘অস্বাস্থ্যকর খাবার’ অধিক পরিমাণে গ্রহণ করা, যা ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণও বটে।  বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৫৯% মারা যায় অসংক্রামক রোগের কারণে। ২০১৭ সালে বেড়ে হয়েছে ৩.৪%। [সূত্র : এফএও : বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি প্রতিবেদন]


প্রতিটি মানুষের সুস্থতা নির্ভর করে তার প্রাত্যহিক জীবনাচারণের উপর। তিনি শরীরের কতটা যত্ন নিচ্ছেন, পরিবারের সবাই কতটা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন এবং সকলের মনের উদারতা, চিন্তার প্রসারতা কতটা বিকশিত এসবই সকলকে সার্থকভাবে কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগায়। স্বাস্থ্যকর খাদ্য চয়নে যে বিষয়গুলো কাজ করে, তা হলো ক্ষুধা, স্বাদ, খাবারের মূল্য, ক্রয়ক্ষমতা, বাজার, ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ, মানসিক অবস্থা, পরিবারের সংস্কৃতি, বিশ্বাস, খাদ্যজ্ঞান, পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা ইত্যাদি। ফলে, দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচন মোটেও সহজ কাজ নয়। কোন খাবারে কোন পুষ্টিগুণ আছে সে বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান থাকা জরুরি। কিন্তু মুশকিল হলো মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সুষম খাদ্য নির্বাচন একসাথে হাত ধরাধরি করে যায় না। পারিবারিক সংস্কৃতি, জিহŸার স্বাদ এবং তৃপ্তি -এ  বিষয়গুলো এমনভাবে আকৃষ্ট করে যে, খাবার সময় পুষ্টি জ্ঞান সেখানে গৌণ হয়ে যায়।


আমাদের মোটামুটি একটা ধারণা আছে পুষ্টি কী এবং কোন কোন খাবার থেকে কী কী পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। পুষ্টি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গৃহীত খাদ্য শোষিত হয়ে শরীরে তাপ ও শক্তি উৎপন্ন করে, শরীরের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয়পূরণ করে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এসবের ব্যবহারিক দিক কী? সে কারণে ফলিত পুষ্টির জ্ঞান থাকাও আবশ্যক। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সঠিক খাদ্য নির্বাচন, নির্বাচিত খাবার সঠিক উপায়ে রান্নার জন্য প্রস্তুতকরণ, সঠিক উপায়ে রান্না করা এবং সঠিক উপায়ে খাবার গ্রহণ -এসবের যোগফলই  হলো ফলিত পুষ্টি। কোন্ কোন্ খাবার থেকে তাপ ও শক্তি পাওয়া যায়? ভাত, রুটি, আলু, চিনি, তেল, মাখন, ঘি, মধু, বাদাম থেকে তাপ ও শক্তি পাওয়া যায়। আমিষ জাতীয় খাবার যেমন - মাছ, মাংস, ডাল, দুধ, ডিম, শরীর বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ করে। ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার যেমন -শাকসবজি, আম, পেঁপে, কাঁঠাল, আনারস, পেয়ারা, আমলকি, আমড়া, লেবু, গাজর, মিষ্টিকুমড়া, দুধ, ডিম, কলিজা রোগ প্রতিরোধ করে।


আমাদের মাঝে যারা রান্না-বান্নায় সকল সময় সম্পৃক্ত থাকেন তাদের আরও কিছুটা জ্ঞান থাকলে ভালো হয় বৈকি। যেমন- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আ্যন্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ উপাদানসমৃদ্ধ খাবারের কোনো বিকল্প নেই। শাকসবজিতে যে পরিমাণ ভিটামিন থাকে তা দিয়েই আমাদের দিনের চাহিদাপূরণ করা সম্ভব। শাকসবজির ভিটামিন ধরে রাখার সর্বোত্তম উপায় হলো ভাপে বা প্রেশার কুকারে রান্না করা। সবজি কাটতে হবে ধারালো বটি বা ছুরি দিয়ে। ভোঁতা ছুরি/বটি দিয়ে কাটলেও ভিটামিন নষ্ট হয়। শাকসবজি কাটতে হবে বড় বড় টুকরা করে, এতে আলো ও বাতাসের সংস্পর্শে ভিটামিনের ক্ষয় কম হয়। ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ও খনিজ উপাদান এর অপচয় রোধে সবজির খোসা ছাড়ানো ও টুকরা করার পর আবার ধোয়া যাবে না, পানিতে ভিজিয়ে রাখা যাবে না। খোসাসহ সবজি রান্না করলে পুষ্টি উপাদান বেশি মাত্রায় ধরে রাখা যায়। পুষ্টির উপাদান ধরে রাখতে রান্নার ঠিক আগের মুহূর্তে কাটতে হবে। ঢাকনা দেওয়া পাত্রে রান্না করা ভালো। এতে রান্না দ্রæত হয়, খাবার অক্সিজেনের সংস্পর্শে কম আসে বলে ভিটামিন নষ্ট কম হয়। রান্নায় যতটা সম্ভব কম পানি ব্যবহার করতে হবে। দীর্ঘ সময় ও উচ্চতাপে রান্নায় শাকসবজির ভিটামিন নষ্ট হয়। পরিমাণ মতো তেল দিয়ে শাকসবজি রান্না করলে ক্যারোটিন অক্ষুণœ থাকে। সেই সঙ্গে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনগুলোও সহজেই দেহে শোষিত হয়। একটু চেষ্টা করলেই পুষ্টি উপাদান রক্ষা করে রান্না করা সম্ভব।


জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা অনুযায়ী একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির দিনে ১০০ গ্রাম শাক, ২০০ গ্রাম সবজি এবং ১০০ গ্রাম ফল গ্রহণ করা উচিত। জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা  অনুযায়ী একজন মানুষের প্রতিদিন ২৪০০ কিলোক্যালরি খাবার গ্রহণ করতে হবে। তবে মানুষের বয়স, লিঙ্গ, ওজন, উচ্চতা, পেশা এবং তিনি শারীরিক পরিশ্রম করেন কি না ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে, তিনি কী পরিমাণ কিলোক্যালরির খাবার গ্রহণ করবেন। এই মোট কিলোক্যালরির ৬০% কার্বহাইড্রেট থেকে, ১৫% প্রোটিন এবং ২৫% ফ্যাট/চর্বি থেকে গ্রহণ করতে হবে। তার খাবার গ্রহণের পরিকল্পনা হতে পারে নিম্নরূপ: [Ref: Food Composition Table for Bangladesh]
সকালের খাবার - আনুমানিক ৭০ গ্রামের ২টি আটার রুটি (২০০ কিলোক্যালরি), ২০০ গ্রামের ১ বাটি মিশ্র সবজি (১০০ কিলোক্যালরি), ৬০ গ্রামের ১টি ডিম (৭০ কিলোক্যালরি), ৫০ গ্রাম ওজনের একটি কলা (৫০ কিলোক্যালরি), চিনিসহ ১ কাপ রঙ চা (২৯ কিলোক্যালরি)। সকাল ১১টার পর ৫০ গ্রাম ওজনের চীনাবাদাম (২৯৩ কিলোক্যালরি) খেতে পারেন। [মোট-৭৪২ কিলোক্যালরি]


দুপুরের খাবার - ২০০ গ্রাম ওজনের ১ বাটি ভাত (২০০ কিলোক্যালরি), ১০০ গ্রাম ওজনের ২ পিছ মুরগির মাংস (১২৮ কিলোক্যালরি), ২০০ গ্রাম ওজনের ১ বাটি শাক (১০০ কিলোক্যালরি), ২০০ গ্রামের ১ বাটি মিশ্র সবজি (১০০ কিলোক্যালরি), ২০০ মিলি. ওজনের ১ বাটি ঘন ডাল (১৮০ কিলোক্যালরি) খাওয়া যেতে পারে। [মোট-৭০৮ কিলোক্যালরি]
বিকালের নাশতা - ২৫ গ্রাম ওজনের ১ বাটি মুড়ি (৯০ কিলোক্যালরি), ৫০ গ্রাম ওজনের ১ বাটি ছোলা (১৮০ কিলোক্যালরি), ১০০ গ্রাম ওজনের কয়েক টুকরা পেয়ারা (৬৩ কিলোক্যালরি), ৫০ গ্রাম ওজনের ১টি কলা (৫০ কিলোক্যালরি), চিনিসহ ১ কাপ রঙ চা (২৯ কিলোক্যালরি) পান করতে পারেন। [মোট-৪১২ কিলোক্যালরি]
রাতের খাবার - ২০০ গ্রাম ওজনের ১ বাটি ভাত (২০০ কিলোক্যালরি), ৮০ গ্রাম ওজনের ১ পিছ মাছ (১০০ কিলোক্যালরি), ২০০ গ্রামের ১ বাটি মিশ্র সবজি (১০০ কিলোক্যালরি), ১৫০ মিলি. ওজনের ১ কাপ দুধ (১০০ কিলোক্যালরি) এবং ১১৫ গ্রাম ওজনের মৌসুমি ফল (৩৮ কিলোক্যালরি) খেতে পারেন। [মোট-৫৩৮ কিলোক্যালরি]


এতক্ষণ ধরে যে খাবারের কথা উল্লেখ করা হলো তার মধ্যে নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে, অত্যন্ত লোভনীয় খাবার ফাস্টফুড নেই, নেই কোমল পানীয়! আরও মজার খাবার সিঙ্গারা, পুরি, আলুর চপ, সমুচা, ফুসকা, ডিমের চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু, ডালপুরি কোথায়? আর মজার সব খাবার যে তেলে ভাজা হয় সেই তেল বারবার উত্তপ্ত করা হয়। একই তেল বারবার ব্যবহার করলে উচ্চ মাত্রায় এলডিহাইড তৈরি হয়, যা ক্যানসার, হৃদরোগ, আলঝেইমার, স্মৃতিভ্রংশ এবং পারকিনসন রোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এছাড়া, রান্নার সময় ফ্রিজ থেকে বের করেই সরাসরি উচ্চ তাপমাত্রায় অনেকক্ষণ ভাজা হলে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদান (Heterocyclic Amines) খাদ্যের মধ্যে তৈরি হয়। একইভাবে Grill (গ্রিল) করা খাবারেও পলিএরোমেটিক হাইড্রোকার্বনসমূহ (পি.এ.এইচ) তৈরি হয়, যা প্রোস্টেট ক্যান্সারসহ অন্যান্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। একই তেল বারবার ব্যবহার করলে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ট্রান্স ফ্যাট সম্পৃক্ত ফ্যাট থেকে অধিক ক্ষতিকর, কারণ এরা একদিকে যেমন দেহে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ হ্রাস করে। ট্রান্স ফ্যাট হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার এবং লিভারজনিত রোগসমূহের সাথে সম্পর্কযুক্ত। প্রকৃতপক্ষে আমরা যদি পুষ্টিকর খাবার খেয়ে সুস্থ থাকি তাহলে শরীর ভালো থাকবে, মনও ভালো থাকবে। আমরা কাজ করতে শক্তি পাবো, যা আমাদের সুন্দর, সম্ভাবনাময় ও উজ্জ্বল ভবিষৎ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। সবশেষ যে কথাটি বলব, তা হলো খাবার গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে - এ কথা সত্য; কিন্তু কী খাবো? জেনেশুনে এবং বুঝে খাবো। জিহŸাকে সংবরণ করব। জিহ্বাকে সংবরণ করতে পারলে সুষম খাবার যেমন খেতে পারা যাবে তেমনি জিহ্বার যখন তখন বা যেখানে সেখানে অযাচিত ব্যবহারের কারণে জীবনের অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকেও মুক্তি মিলবে।

পরিচালক, বালাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, মোবাইল : ০১৭২৭৫৩১১০০, ই-মেইল : kaziabulkalam@gmail.com

 

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon